ইন্টারনেট মানেই আজকের পৃথিবীর অক্সিজেন। আর সেই অক্সিজেন সিলিন্ডারই যদি হঠাৎ রংবাজি শুরু করে? মঙ্গলবার দুপুরে ঠিক এমনটাই ঘটল। বিশ্বজুড়ে অসংখ্য ওয়েবসাইট ব্যবহারকারীদের মুখের ওপর দাঁড় করিয়ে দিল একটি কড়া বার্তা, নাম দেখার সাথে সাথে যার উচ্চারণ—ক্লাউডফ্লেয়ার।
এটি এমন এক কোম্পানি, যাদের কাজ থাকে পর্দার আড়ালে। একেবারে চলচ্চিত্রের সেই নায়ক, যিনি নায়িকা বাঁচান কিন্তু হিরোইজম দেখিয়ে শিরোনামে আসেন না। কিন্তু যতক্ষণ সব ঠিক চলছে ততক্ষণই তারা অচেনা; ঝামেলা হলে তখনই তাদের নাম রীতিমতো হেডলাইনে।
মঙ্গলবার দুপুরের পর বিশ্বের বড় বড় ওয়েবসাইটে কেউ ঢুকতে গেলেই সামনে দেখা গেছে ক্লাউডফ্লেয়ারের শীতল ম্যাসেজ—
“প্রযুক্তিগত ত্রুটির জন্য দুঃখিত, কয়েক মিনিট পর আবার চেষ্টা করুন।”
কথাটা শুনতে ভদ্র, কিন্তু যার লাইভ ম্যাচ চলছিল বা চাকরির আবেদন করতে যাচ্ছিল সে তো দমই ফেলে বসে রইল।'''
ক্লাউডফ্লেয়ার কে বা কোন বাবা?
মার্কিন এই ওয়েব অবকাঠামো কোম্পানিকে বলা হয় ইন্টারনেটের নিরাপত্তা ও গতি বৃদ্ধির ছাতা। ওয়েবসাইট লোডিং এর দায়িত্বে থাকে তাদের বিশাল নেটওয়ার্ক। কোটি কোটি ওয়েবসাইটের ট্র্যাফিক নাকে দড়ি বেঁধে সোজা করে চালানোই তাদের মূল কাজ।
যদি মূল সার্ভার হয় রাজা, তবে ক্লাউডফ্লেয়ার হলো সেই অগ্রদূত সৈন্যদল, যারা ট্র্যাফিকের ঝড় সামলিয়ে রাজাকে শান্ত থাকতে দেয়।
গুগলে দ্রুত লোড, হ্যাকারদের কাচুমাচু করা, এবং সার্ভার বাঁচানো—সবকিছুই একই প্যাকেজে।
কেন এইসব কোম্পানি এত গুরুত্বপূর্ণ?
ইন্টারনেটে কোনো ওয়েবসাইট যদি বেশি লোক একসঙ্গে ভিজিট করে, সার্ভার বলে—ভাই আর পারছি না।
ক্লাউডফ্লেয়ার বলবে—চুপচাপ থাক, বাকি আমি দেখে নিচ্ছি।
তবে এখানে ঝুঁকিও আছে।
এক কোম্পানি যদি এত ওয়েবসাইটকে এক ভেলায় রাখে, আর সেই ভেলার মাঝেই যদি ফুটো হয়?
তাহলেই দেখতে হয় আজকের মতো দৃশ্য—খুবই ব্যস্ত ইন্টারনেট হঠাৎ ছুটিতে চলে যাওয়া।
হুলস্থূলের কারণ কী ছিল?
তাদের শক্তিশালী নেটওয়ার্কে একটুখানি বিগড়ামি। আর সেই সামান্য বিঘ্নই ইন্টারনেটের বিশাল যন্তরবৎ মেশিনকে থামিয়ে দিল মুহূর্তে।
সোশ্যাল মিডিয়া এক্স (পুরোনো টুইটার) থেকে শুরু করে অসংখ্য ওয়েবসাইট রীতিমতো নড়েচড়ে উঠে বলল—যাঃ, ক্লাউডফ্লেয়ার আবার কি করল!
ক্লাউডফ্লেয়ার ডাউন মানেই ইন্টারনেটের কেঁদে ওঠা
গত মাসে অ্যামাজন ওয়েব সার্ভিসেস বা AWS নাক টিপে ধরেছিল—আর তখন হাজারো সাইট বন্ধ হয়ে কলারবাজি দিয়েছিল।
আজ সেই জায়গায় ক্লাউডফ্লেয়ার।
এদের কাজ পেছন থেকে করা, তাই সাধারণ দিনগুলোতে দেখা মেলে না।
কিন্তু একবার যখন বিপ দেবে—তখনই সবাই বুঝবে, আসল হিরো আসলে স্পটলাইটে থাকে না।
ওয়েবসাইট চালানোর সুরাহা যত গোপনে করা হোক
তাদের একটি হাঁচিই বিশ্বকে কাঁপিয়ে দিতে পারে।
আজকের ঘটনায় সেই কথাটাই আবার সবাই শিখল।
ইন্টারনেট যত বড় হবে, ক্লাউডফ্লেয়ার ততই গুরুত্বপূর্ণ।
আর তারা অসুস্থ হলে, পুরো ওয়েবই পড়ে যায় ডাক্তারখানায়।